জীবনের কিছু প্রশ্ন
এক
জীবনের কিছু প্রশ্ন নিয়ে আজ আলোচনা করবো ভাবছি। জানিনা হয়তোবা কাজে আসবে, কিছুটা শান্তি পাবো । আমি তখন ক্লাস ওয়ানে বা টু তে পড়ি l আমাদের স্কুলের নাম ছিল 411 নং সোনাখিরা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে সময় প্রায় এগারোটা বা বারোটা বাঁচবে তখন ঘড়িতে। স্কুলে মাত্র তিনজন শিক্ষক ছিলেন কিন্তু সেদিন একজন উপস্থিত ছিলেন তিনি আমাদের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন তেওয়ারি। নাম যেমন মধুসূদন কাজও তেমনি। ওনার আবার একটা শখ ছিল খুব নেতাগিরি টিরি করতেন। আগের দিন স্কুলে কিন্তু মাস্টারমশাইদের লেখাপড়া করানোর কোন দরকার ছিল না উচ্চ ক্লাসের ছাত্রদেরকে দিয়ে নামতা পাঠ করানো সাফাই অভিযান করানো এসবই মুখ্য কাজ ছিল। সেদিন যথারীতি সাফাই অভিযান করার পর ক্লাস বসলো। আমাদের বাইরে লেখাপড়া করতে হতো গাছের ছায়ায় বসে।
সেদিন বাচ্চারা খেলা করছিল আমিও তাতে সামিল ছিলাম আসলে তো বাচ্চাই ছিলাম না। তখন আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে ছিল গিয়াস উদ্দিন ছোটবেলাতে খুব দুষ্ট ছিল। বলতে পারেন খুব ক্লেভার টাইপের দুষ্টুমি ও নিজে থেকেই করবে কিন্তু বিচার দিতে আগে যাবে এমন ভান করত সবাই ভাবতো ওকে মারা হয়েছে বা কিছু একটা করা হয়েছে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ওভাবেই করে যেত কারন একটা ভয় ছিল আমরা যে রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসতাম ওর বাড়ি রাস্তার পাশেই ছিল ও আগে দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে বাড়িতে বলে দিতো। আর ওর বাড়ি থেকে মামা, কাকি, চাচা, চাচি, যত বাচ্চা সবাই বেরিয়ে এসে রাস্তাতে আমাদেরকে পাকড়াও করতো তাই ভয়ে আমরা কেউ কিছু বলতাম না।তো সেদিন খেলাধুলার মাঝেও ও হঠাৎ গুরুজি কে যেন বলে দিল গুরুজি এসে স্কেল দিয়ে আমাকে অনেক মার মারলেন কোনো বিচার ছাড়া।
আমি বুঝতে পারলাম না সেদিন কেন গুরুজি আমাকে মেরেছিলেন আজ অব্দি তার উত্তর খুঁজে পাইনা তাই এটা আমার কাছে প্রশ্ন হয়েই রইল। পরবর্তীকালে সেই গুরুজি ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে একবার এমএলএ ও হয়েছিলেন। সে দিনের স্মৃতি আজ অব্দি আবার মুছে যায়নি।
দুই
আরো একবার আমাদের গ্রামের পাশের বাড়িতে কি জানি একটা লাউ চুরি হয়ে গিয়েছিলো আমাকে কিন্তু তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল পরে অবশ্য কে চুরি করেছে ধরা পড়েছিল। ছোটবেলার পরিবেশ আমাদের এত ভাল ছিলনা খুব বাজে পরিবেশে আমাদের থাকতে হতো। গ্রামের মধ্যে কোন না কোন পরিবারের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত। আমার সকাল বেলা উঠার অভ্যাস ছিল আমি খুব ভোরে উঠতাম আজ অব্দি উঠি। তাই হয়তো তারা আমাকে সন্দেহ করেছিল। আমার মনের দুঃখ পোষা ছিল আরো অনেক বছর বাদে যখন তাদের বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল আমি কিন্তু যাইনি । তাদের গৃহ কলহ ছিলো তাই তাদের মাঝে এই কাজটা কেউ করেছিল। কিন্তু ওই পরিবারের লোকজন আমাদের উপরে মিথ্যা মামলা দিতে যাচ্ছিল। অবশ্য এ কাজটা তাদের পরিবারের কেউ করেছিল । ছোটবেলার জীবনটা খুব সমস্যা পূর্ণ ছিল। তাই কিছু প্রশ্ন আজও মন থেকে মুছে যায়নি বারবার মনে পড়ে।
তিন
তখন আমি কলেজে পড়ছিলাম সম্ভবত আমার মনে হয় 12th ফাইনাল ইয়ার। তখন আমাদের কলেজের প্রফেসর জমিয়ে টিউশন ব্যবসা করতেন। ওখানে দুটো ভাগ ছিল দুজন প্রফেসর দুইটা পক্ষ। খুব আড়াআড়ি ছিল দুজনের মধ্যে তার ফাঁক থেকে আমরা স্টুডেন্টরাও শিকার হয়ে যেতাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে আছে কোন একদিন আমাকে প্রদীপ স্যার ডেকে বললেন, “শুন রে বা ছাত্র, কারো বিপক্ষে কমেন্ট করতে গেলে, কার সমান হইয়া করিও”। আমি আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারলাম না কেন স্যার আমাকে তখন বলেছিলেন। এটাতো স্পষ্ট , যে কারো প্ররোচনায় এমন বলেছিলেন। কিন্তু একজন জ্ঞানী প্রফেসর হয়ে উনার পক্ষে কাউকে কিছু বলা বিশেষ করে ছাত্রকে কতটুকু যথোপযুক্ত আমার কাছে এটা খুব বড় একটা প্রশ্ন। এখন আমি জীবনে অনেকটা সফল l উনি অবশ্য এখনও চাকরিতে আছেন কিন্তু উনার চেয়েও আমি অনেক বেশি সেলারি পাই। অবশ্য উনার প্রতি আমার একটুক ও কোন শ্রদ্ধা কম হয়নি। These are my inspiration of life.
জীবনের কিছু প্রশ্ন
একে একে জীবনের সব প্রশ্ন এমনি করে বেরিয়ে আসবে অবশ্যই সাথে থাকবেন।